সাঁওতাল লোককাহিনী: রাজকুমারের বুদ্ধি খরিদ

Jumjournal
Last updated Feb 15th, 2020

1101

featured image

সে যে ঠিক কতকাল আগের কথা তা জানা নেই কারো। তবে এটা সত্যি, ঘটেছিল ঘটনাটা। ঘটেছিল যে রাজ্যে তার নামটাও রয়ে গেছে অজানাই — যেমন রাজার নামটাও বলতে পারে না কেউ। তবু শুরুটা এইরকম—এক ছিল রাজা—তার ছিল এক ছেলে। আর সেই ছেলেকে নিয়েই এই গল্প।

রাজার ছেলে—তাই বেড়ে উঠেছে আপন খেয়াল খুশি মতো। রাজা তাকে বলে, পড়, পড়, ওরে পড়। না পড়লে সব জানবি-শুনবি কেমন করে? কেমন করে চালাবি এই রাজ্য?

কিন্তু কা কস্থ পরিবেদনা। কে শোনে কার কথা। রাজপুত্র থাকে তার আপন খেয়ালে। লেখাপড়ায় মন নেই তার একদম। এতটুকু আগ্রহ নেই তার কোনো কিছু শেখায়।

এইভাবেই দিন কেটে যায়। সে যে কতদিন তার হিসেব রাখেনি কেউ। তবে অনেকগুলো দিন, মাস, বছর পেরিয়ে রাজপুত্র পৌঁছোয় যৌবনে। রাজপুত্র যখন খুব ছোট্টটি ছিল সেই সময়ই রাজা দিয়েছিল তার বিয়ে।

আসলে রাজপুত্রের বিয়ের জন্য তো আর কোনো গুণের দরকার হয় না। রাজা চাইলেই হয় তার ছেলের বিয়ে। তা এই রাজপুত্রেরও বিয়ে হয়েছে সেই ছোটবেলায়। তারপর কেটে গেছে এতগুলো বছর—কিন্তু রাজা তাকে বলেই যায়—ওরে পড়, পড়, লিখতে শেখ।

একদিন কিন্তু রাজা ভীষণ রেগে গেল। বেশ কড়া গলায় ছেলেকে বলে, আমি তোকে কতদিন ধরে বলছি লেখাপড়া করতে, কিন্তু তাতে তোর কানই নেই। এতুবড় রাজ্যের রাজা আমি। কিন্তু তুই এমনই হাঁদা-গাধা, এই রাজ্য যে তোকেও শাসন করতে হবে সে কথাটা বুঝিস ।

আমি যখন থাকব না, তখন তুই রাজ্যটা চালাবি কি করে? তুই রাজার ছেলে, তোর কাছে যখন কোনো গাঁওবুড়ো, কিংবা কোনো দলের নেতা অথবা দেশের মোড়ল আসবে কোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলতে, তখন তুই কী করবি? তুই কথা পর্যন্ত বলতে শিখলি না— কেমন করে তাদের সঙ্গে কথা বলবি ? তারা যে সমস্যা নিয়ে আসবে কী বিচার করবি তার? আজ, না হয় কাল আমি যখন থাকব না। তখন তোর দুর্দশা কী হবে ভেবেছিস একবারও?

সত্যি কথা বলতে কী, রাজার সেদিনের বকুনি রাজপুত্রের মনে বড় লাগল। সে ভাবে, বাবা যা বলছে তা সবই সত্যি। আর দেরি না করে আমি বরং বেরিয়ে পড়ি দেশে দেশে, তাহলেই কিছু না কিছু শিখতে পারব।

এই কথা ভেবে গেঁজে বেশ কিছু টাকা-কড়ি আর তিন টুকরো সোনা নিয়ে রাজপুত্র বেরিয়ে পড়ল ভ্রমণে। যাবার আগে শুধু বৌকে জানিয়ে গেল কথাটা।

চলতে চলতে অনেক দুর গেল রাজপুত্র। লোকে বলে, অত রাস্তা চলেও রাজপুত্র তেমন কাউকে পেল না যার কাছে কিছু শিখতে পারে। তাই চলা তার আর থামে না।

একদিন শেষে রাজপুত্র বড়ই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। লোকে বলে, ঠিক সেই সময়ই তার নজরে পড়ল একজন চাষী। মাঠে লাঙল দিচ্ছিল সেই চাষী। তাকে দেখে রাজপুত্র ভাবে, আর কাউকে পাবার আগে বরং এই চাষীর কাছে একটু খৈনি চেয়ে আলাপ শুরু করি।

এই না ভেবে রাজপুত্র চাষীর কাছে চায় একটু খৈনি। তারপর খৈনি খেতে খেতেই শুরু করে আলাপ। বলে, আচ্ছা এ অঞ্চলে কোনো কথাবোধি মানে কথা বলার ওস্তাদ আছে কিনা বলতে পার? চাষী বলে, কেন কথাবোধর সঙ্গে কী দরকার তোমার?

দেখ, সত্যি কথাই বলছি। আমি হচ্ছি অমুক দেশের তমুক রজার ছেলে। আমি কিছুই শিখিনি এখনও। তাই কিছু শেখার জন্য বেরিয়েছি দেশ ভ্রমণে। তা এখানে যদি কোনো কথাবোধি থাকে, অথবা তুমি নিজেই যদি জানো, তাহলে আমাকে কিছু শেখাও।

চাষী বলে, হ্যা, সত্যি আমার জ্ঞান আছে। আমি তোমাকে দুচারটে জিনিস শেখাতেও পারি, অবশ্য যদি তোমার তা শেখার ইচ্ছে থাকে।

রাজপুত্র বলে, আমি তো শিখতেই চাই। শিখতে চাই বলেই তো এত দূর দেশে এসেছি। এখন বল তোমার কি শেখানোর আছে ? তবে প্রথমে একটা কথা জেনে নেই, তুমি কী মাগনা শেখাবে, নাকি এজন্য কিছু নেবে? মাগনা শেখাব? না, কখনই নয়। আমার শেখানোর জন্য তোমাকে নিশ্চয় কিছু দিতে হবে।

ঠিক আছে, যদি কিছু দিতে হয় দেব। তুমি আমাকে যতগুলো জিনিস শেখাবে তার প্রত্যেকটার জন্য আমি তোমাকে এক টুকরো করে সোনা দেব।

রাজপুত্রের এ কথার জবাবে চাষী বলে, বেশ, আমি তোমাকে শেখাব। খুব মন দিয়ে শুনবে কিন্তু আর যা বলব তা জীবনে ভুলবে না। এখন শোনো, তুমি হচ্ছ রাজপুত্র, তাই কারো বাড়িতে, কিংবা কোনো মোড়ল বা কোনো প্রজার সঙ্গে তোমার দেখা করতে যেতে হতেই পারে।

সেখানে গেলে তোমাকে বসার জন্য তারা একটা চাদর, কিংবা চাটাই বা একটা পিড়ি পেতে দেবে। তোমাকে বসার জন্য যাই দিক না কেন, বসতে বললেই সঙ্গে সঙ্গে বসবে না। তোমাকে যেটায় বসতে দিয়েছে সেটা একটু টেনে অন্য জায়গায় সরিয়ে তারপর বসবে, কেমন? এই হল প্রথম শিক্ষা। দাও এবার এক টুকরো সোনা। রাজপুত্রও সঙ্গে সঙ্গে তাই দেয়।

চাষী আবার শুরু করে, এবার আমি তোমাকে আর একটা জিনিস শেখাব। তুমি রাজপুত্র, তোমাকে চান করতে যেতে হবে। তা যেখানেই চান করো না কেন, সব সময় আঘাটায় চান করবে। সবাই যেখানে চান করে ভুলেও সেখানে চান করবে না, কেমন? এই হল দ্বিতীয় শিক্ষা।

রাজপুত্র সোনার দ্বিতীয় টুকরোটা দেয় চাষীকে। চাষী বলে, আরো একটা জিনিস তোমাকে শেখার আছে। তুমি রাজপুত্র, লোকজন তোমার কাছে আসবে কোনানো বিরোধ নিয়ে, কিংবা কোনো প্রস্তাব নিয়ে বা কোনো বিষয়ে কথা বলতে।

এসব ক্ষেত্রে সবাইকে নিয়ে কথা বলবে। আর এ ব্যাপারে দশ জন বা পঞ্চ জন যা বলবে তাই মেনে নেবে। কখনই নিজের মতটা চাপাবার চেষ্টা করবে না, তাদের কথা মান্যি করবে, কেমন? এই হল আমার তৃতীয় শিক্ষা।

রাজপুত্র এবার চাষীকে সোনার তৃতীয় টুকরোটাও দিয়ে বলে, দেখ, আমার কাছে আর সোনা নেই, আর কী তোমাকে দেশ বলো তো?

চাষী বলে, তোমার যখন আর সোনা নেই তাহলে আর শিখবে কী করে ? তবে ঠিক আছে, আরো একটা জিনিস তোমাকে শেখাচ্ছি মাগনাই। বেশ, শেখাও।

চাষী বলে, তুমি রাজার ছেলে, সে জন্যই বলছি, কখনই কোনো সময় চট করে রেগে যেয়ো না। রাগ হলেও তা চেপে রাখবে, প্রথমেই  শক্তি প্রয়োগ করবে না। আগে অন্য পক্ষের কথা শুনবে তারপর মনে মনে বিচার করবে, কেমন! প্রথমেই গণ্ডগোলে জড়াবে না।

রাগ চেপে রেখে একবার দুবার সংশোধনের সুযোগ দেবে। তাতেও কাজ হলে তোমার যা ইচ্ছে তাই করতে পারো তখন। ব্যস, এটাই তোমাকে মাগনা শিখিয়ে দিলাম।

তোমার সব সোনা ফুরিয়ে গেছে তাই, না হলে আমি তোমাকে আরো শেখাতে পারতাম। যাক, এবার তুমি তোমার কাজে যাও, আমিও আমার কাজ করি।

এই কথার পর রাজপুত্র চলতে থাকল আবার। সে মনে মনে ভাবে কী ছোট ঘোট কথা দিয়েই না লোকটা আমায় বোকা বানিয়ে সোনার টুকরোগুলো সব নিয়ে নিল। ও যা বলল, তা সত্যি, না মিথ্যে তাই বা কে জানে? তারপর আবার নিজেই বলে, যাক, আগে পরীক্ষা করে তো দেখা যাক।

এইরকম সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে চলছে রাজপুত্র। একসময় তার খাবার-দাবার সব ফুরিয়ে যায়। তখন ঠিক করে, এই শহর থেকে আগে কিছু খাবার-দাবার কিনে তারপর সে আবার এগোবে। এই  ভেবে সে যায় শহরের বাজারে।

জমজমাট বাজার। চারিদিকে সাজানো-গোছানো দোকান। আর সবাই চেঁচাচ্ছে, এদিকে আসুন, এখানে সব সেরা জিনিস আছে, সস্তায় পাবেন—এদিকে—এদিকে। কেউ কেউ বলে, না কিনলেন তো কী হলো, বসে একটু তামাক খেয়ে যান। এইসব আর কী!

যাই হোক, অত হল্লার মধ্যে রাজকুমার তো ঢুকল এক দোকানে। দোকানদার তাকে বসতে বলল বিছানো এক কাঁথার ওপর। বসতে গিয়েই রাজকুমারের মনে পড়ল তার ওই চাষী গুরুর কথা। সঙ্গে সঙ্গে সে কথাটাতে একটু টান দিল। আর তখনই দেখতে পেল বেশ একটা বড় গর্তর ওপর বিছানো ছিল কথা। সে যদি সোজাসুজি। বসতো তাহলে ওই গর্তে পড়েই হয়তো মরতে হতো তাকে।

রাজকুমার ভাবে, গুরু তাহলে জবর শিক্ষা দিয়েছে। না, সোনা দেওয়া সার্থক। রাজকুমার দোকান থেকে কিছু খাবার-দাবার কিনে আবার চলতে শুরু করে। মনে কিন্তু গুনগুনিয়ে ওঠে শুধুই তার চাষী গুরুর কথাগুলি।

 হাঁটতে হাঁটতে সে যে কতদূর এসেছে, তা কে জানে! এক জায়গায় সে দেখতে পেল বেশ বড় একটি পুকুর। পুকুর দেখেই রাজকুমার ভাবে এখানে চানটা সেরে কিছু খেয়ে নি; তারপর আবার

পুকুরের কাছে গিয়েই মনে পড়ল তার গুরুর কথা। সঙ্গে সঙ্গে ঘাট ছেড়ে চলে গেল আঘাটায়। জামাকাপড় এবং অন্যসব জিনিস রেখে রাজকুমার চানটা করে নেয়। তারপর সেখানেই খাওয়া সেরে রওনা হয় পথে।

কিছুদুর গিয়েই মনে পড়ে তার, তাই তো, টাকার গেজটাতে সে ফেলে এসেছে সেই পুকুর পাড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট।’ গিয়ে দেখে তার সেঁজ রয়েছে তেমনি ভাবে। গেজটা কোমরে গুজতে গুজতে রাজপুত্র ভাবে, গুরু আমার সত্যি জবর।

যদি ঘাটে চান করতাম তাহলে এতক্ষণে অন্য কেউ জল নিতে এসে নিয়ে যেত গেঁজ। আঘাটায় চান করার জন্যই ফেরৎ পেলাম টাকা। না, সোনা দেওয়া আমার সার্থক হয়েছে।

রাজপুত্র হাঁটছে তো হাঁটছেই। হাঁটতে হাঁটতে হয়ে যায় সন্ধ্যে। তখন গাঁয়ের লোকদের কাছে গিয়ে সে শোবার জন্য একটু জায়গা চায়। গাঁয়ের লোক বলে, যাও না গাঁওবুড়োর কাছে। ওখানেই তুমি থাকবে ভালো। তার আছে বেশ বড় চওড়া বারান্দা—কোনো কষ্টই হবে না তোমার।

 তাদের কথায় রাজকুমার সত্যি সত্যি যায় গাঁওবুড়োর কাছে। বলে, শোবার জন্য একটু জায়গা পেতে পারি। নিশ্চয়ই পারো। কিন্তু শুতে হবে বারান্দায়। তাতেই আমি খুশি। রাজপুত্রের সে কথায় গাঁওবুড়ো বলে, তবে যাও ওই বারান্দায় রাহী পথিকদের জন্যই রয়েছে ওটা।

রাজকুমার তাই যায়। সে বারান্দায় গিয়ে দেখে, তার আগেই সেখানে এসেছে আরেকজন। সে এক যোগী। খড় বিছিয়ে সে আয়োজন করছে শোয়ার। রাজকুমার তার কাজে কিছু খড় চায় শোয়ার জন্য। সেও দেয়। তাই বিছিয়েই শুয়ে পড়ে সে।

কপাল মন্দ, ঘুমের মধ্যেই মারা যায় যোগী। সকালে উঠে তাই দেখে গাওবুড়ো বলে রাজকুমারকে, দাড়াও, এখনই যেও না। ডাকি পঞ্চজনকে, তারা কী বলে শুনি, তারপর হবে ব্যবস্থা।

সবাই এলে গাঁওবুড়ো বলে, এই দুই বিদেশী এসেছিল কাল রাতে। তারপর কী হয়েছে কে জানে, তবে সকালে দেখছি একজন মারা গেছে। এখন বল সবাই কী করা যায়।

 চলল খানিকক্ষণ শলা-পরামর্শ। তারপর ঠিক হয় ছুড়ে ফেলে । দাও ওই মড়াটা। কিন্তু ফেলবে কে? একজন বলে, কেন, যে কাল রাতে শুয়েছিল ওর পাশে সেই ফেলুক।

আর সবাই বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ, ওই ফেলুক। না ফেললে ওর যে অবস্থা হয়েছে এরও সেই হাল করব। কথাটা শুনে রাজকুমার বলে, তোমরা জান না, আমি একজন রাজকুমার। আমি কেন ফেলব মড়া। আমি পারব না।

রাজকুমারের কথা শেষ হবার আগেই তেড়ে আসে লোকগুলি। আর তখনই তার মনে পড়ে যায় তার গুরুর কথা, পাঁচজনের সিদ্ধান্ত অমান্য কোরো না কখনো। তাই সঙ্গে সঙ্গেই বলে, না, না, ঠিক আছে, আমিই ফেলে দিচ্ছি ওকে।

মড়াটাকে সে ফেলে দেয় নদীর চরে। বুড়োরা বলে, মড়ার কাপড় খুলে দিতে হয়। রাজকুমার তাই সেই যোগীর কোমরের কশি আলগা করে। আর তখনই দেখে, তার কোমরের গেঁজে রয়েছে অনেক টাকা। রাজকুমার নিয়ে নেয় তা।

এইসব করতে করতেই অবশ্য দুপুর গড়িয়ে যায়। রাজকুমার সেখানেই চান করে, কিছু খেয়ে আবার পাড়ি দেয় পথে।

চলতে চলতে রাত হয়। বেশ গভীর রাত। রাজকুমার অবশ্য তখন পৌঁছে গেছে নিজের রাজ্যেই। একবার ভাবে সে বাড়ি গিয়ে ঘুমাবে। আবার ভাবে রাতটা বাইরে কাটিয়ে সকালে সে যাবে বাড়ি। সাত-পাঁচ ভেবে শেষে ঠিক করে, না, আজ বাড়িই ফিরব।

তারপর সত্যি সত্যি সে বাড়ির পথে হাটতে থাকে। হাটাতে হাটতে সে হাজির হয় তার বাড়িতে। সবাই তখন তলিয়ে রয়েছে ঘুমের সমুদ্রে। রাজকুমার তাই সোজা চলে যায় তার ঘরে যেখানে সে থাকত তার বউযের সঙ্গে।

ঘরের কাছে এসেই কিন্তু রাগ জ্বলে ওঠে তার সারা শরীর। মাথায় উঠে যায রক্ত। তার ঘরের বন্ধ দরজাই সামনে রয়েছে এক-জোড়া জুতো আর একটা তরোয়াল। সে তরোয়ালটা তুলে নের খাপস্থদ্ধ, তারপর বেশ চেঁচিয়েই বলে, এই, কে, কে ঢুকছে আমার ঘরে।

এখন ব্যাপারটা হয়েছে কী, সেই ঘরে তখন শুয়েছিল রাজকুমারের বোন আর বউ। রাজকুমার ঘরে নেই বলেই ননদ-বৌদি মিলে ঘুমাতো ওই ঘরে।

তা রাজকুমারের হাঁক ডাকে ঘুম ভেঙে যায় দুজনেরই। তারা আলো জ্বালে। রাজকুমারের বোন বলে বৌদি দাদা ফিরেছে, আমি তাহলে চলে যাই অন্য ঘরে। এই বলে দরজা খুলতে গিয়ে দেখে তার দাদা দাড়িয়ে আছে খোলা তরোয়াল নিয়ে।

দেখেই ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে সে বলে, দাদা ও দাদা, আমি। তুমি বাড়ি ছিলে না বলে, আমি আর বৌদি শুতাম ঘরে। আর কেউ যাতে ঘরে ঢুকতে না পারে তার জন্যই দরজার কাছে রাখতাম জুতো আর তরোয়াল। ও দাদা বুঝতে পারছ তো, আমি তোমার বোন। তুমি তরোয়ালটা নামাও।

রাজকুমারের কিন্তু তাতেও হুশ হয় না। সে রেগেই বলে, ওসব দাদা ফাদা বুঝি না, আগে বেরোও তারপর দেখছি।

ঘরের মধ্যে বোন কেঁদে বলে, ও বৌদি, দাদা দারুণ রেগেছে, আমাকে কেটেই ফেলবে। বলে সে তার পোশাক ছিড়ে তার টুরো বের করে দেখায় রাজকুমারকে, বলে, এবার বিশ্বাস হচ্ছে তো, আমি তোমার বোন কিনা?

আর ঠিক তখনই রাজকুমারের মনে পড়ে তার গুরুর কথা। মনে পড়তেই কেঁদে ফেলল সে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে সে, কী গাধা আমি, গুরু বলেছিল, রাগকে চেপে রাখতে। অথচ সে কথা না শুনে আজ আমি একটা খুন খারাপি করে ফেলছিলাম। আমার চেয়ে হাঁদা, আমার চেয়ে পাষণ্ড আর কে আছে ? এইসব বলে  অনেকক্ষণ কাঁদল সে।

একসময় রাজাও আসে। দেখে, শোনে আর বোঝে, ছেলে তার বুদ্ধি সওদা করেছে ভালই—এখন তার জ্ঞান হয়েছে বেশ।

এটা যে গল্প নয়, তার প্রমাণ। সঁওতালরা এখনও কোথাও খেতে বসতে গেলে, যতটুকুই হোক, আসন বা চাটাইটাকে একটু সরাবেই সরাবে। যাক সে কথা ঠিক এখানেই শেষ।

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা