অধিকতর সংশােধনকল্পে আণীত এবং মহান সংসদে উত্থাপতি “Forest Act/1927 (Act no- xvi/1927)” সংশােধনী প্রস্তাবের উপর মতামত
543
সরকার কর্তৃক ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখ মহান সংসদে “অধিকতর সংশােধন কল্পে আণীত “Forest Act/1927” এর যে সংশােধনী প্রস্তাব সংসদে বিল আকারে উত্থাপনের আগে সংশ্লিষ্ট জনগােষ্ঠী বিশেষ করে বনবাসী বননির্ভর জনগােষ্ঠী এবং আদিবাসীসহ পরিবেশবাদী ও সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞদের ব্যাপক আলাপ, আলােচনা ও মতামত প্রদানের সুযােগ সৃষ্টি করা উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি।
এই সংশােধনী প্রস্তাবটি বর্তমানে আরাে যাচাই বাছাই এর জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নিকট প্রেরণ করা হয়েছে এবং পরবর্তী সংসদ অধিবেশনে তা অনুমােদনের জন্য সংসদে পেশ করা হতে পারে।
তারপরও এই ক্ষুদ্র পরিসরে প্রস্তাবিত সংশােধনীটি যাদের উপর বেশি প্রভাব পড়বে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস সেই আদিবাসী, বনবাসী এবং বননির্ভর জনগােষ্ঠীর সচেতন অংশের প্রতি প্রস্তাবিত সংশােধনটি আরাে গভীরভাবে আলােচনা পর্যালােচনা এবং আরাে অধিক সংখ্যক জনগণের মধ্যে বিতর্ক ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
বৃটিশ উপনিবেশিক শাসনকালে শাসন ও লুণ্ঠনকে পাকাপােক্ত করার জন্য বিশেষ করে বনজ সম্পদকে নিয়ন্ত্রণ ও শােষনের জন্য ১৯২৭ সনে ২ সেপ্টেম্বর “Forest Act/1927” (Act Noxvi/1927) আইনটি প্রণয়ন করে।
এই আইনের মূল উদ্দেশ্যে ছিল, কাঠ ও বনজাত পণ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ, শুল্ক আরােপ এবং আর্থিকভাবে লাভজনক সীমিত প্রজাতির বন বাগান সৃজন। মূলতঃ এই আইনটি সকল ধারা, উপ-ধারা বন ও বনজ সম্পদের উপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রণীত; যা সেই সময়ের উপনিবেশিক শাসক চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে তাদের মূল কাজ দাঁড়ায় পরিবেশ বা জনগণের স্বার্থের বিপরীতে উপনিবেশিক স্বার্থকে রক্ষা ও প্রাধান্য দেয়া।
১৯৭১ সনে দেশ স্বাধীন হবার পর এই আইনের অনেক সংশােধন হলেও মূল চরিত্র অপরিবর্তিতই ছিল। অর্থাৎ পরিবেশ সংরক্ষণও জনকল্যাণমুখী ছিল না।
বর্তমান গণতান্ত্রিক মহাজোট সরকার গুরুত্বপূর্ণ এই বনসহ পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ সহায়ক যত প্রকার আইন ও বিধি আছে তাকে আরাে জনমুখী ও গণতান্ত্রিক করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সংবিধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ যুক্ত করে। যা নিম্নরূপ :
সংবিধানের ১৮ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “রাষ্ট্র বর্তমান এবং ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব বৈচিত্র্য, জলাভূমি বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবেন।”
সংবিধানের এই সংশােধনীর ফলে বন, পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীব বৈচিত্র তথা সমগ্র ইকোসিস্টেমের সাথে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নাগরিকদের একটি যৌক্তিক সম্পর্ক স্থাপন এই সংক্রান্ত সকল আইন কানুন ও বিধিসমূহকে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক করার পথ প্রশস্ত হলাে।
সংবিধানে এমন একটি গণমুখী ও পরিবেশ সংরক্ষণবাদী ধারা যে সরকার সংযোজন করতে পারে তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যােগ্য। সংগত কারণেই সেই সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও অনেক বেশি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সরকার এযাবত বেশ কিছু আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। যা মান্য করা বা অনুসরণ করার নৈতিক বাধ্য বাধকতা আছে। যেমন- আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা (ILO)-র কনভেনশন ১০৭, প্রাণ বৈচিত্র্য রক্ষার কনভেনশন (CBD) এবং বিশ্ব জলবায়ু রক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি। যেখানে আদিবাসী, বনবাসী বা বননির্ভর জনগােষ্ঠীর অধিকার ও স্বার্থ এবং ইকোসিস্টেম সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আছে।
কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, সংবিধানে উপরােক্ত ধারা সংযােজনের পর পরই সরকার পরিবেশের উপর সব চাইতে যে আইনটির প্রভাব বেশি সেই “বন আইন/১৯২৭” কে অধিকতর সংশােধনের জন্য ২৪টি সংশােধনী প্রস্তাবসহ ইতিমধ্যেই সংসদে উত্থাপন করেছে।
কিন্তু উত্থাপনের পূর্বে জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন ও প্রভাবক এমন একটি আইনের সংশােধনীর বিষয়ে জনমত বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট জনগােষ্ঠী তথা আদিবাসী, বনবাসী এবং বন নির্ভর জনগােষ্ঠীর মতামত প্রদানের সুযােগ না দেয়ার প্রবণতা একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
উপনিবেশিক শাসনের স্বার্থে ও প্রয়ােজনে প্রণীত ১৯২৭ সনের বন আইনকে (যা মূলতঃ প্রশাসনিক আইন) শুধুমাত্র “Make provisions for the conservation and sustainable use of forest” (অথাৎ বনের সংরক্ষণ এবং স্থায়ীত্বশীল ব্যবহারের লক্ষ্যে) এই শব্দগুচ্ছ সংযােজন করে গণমুখী ও পরিবেশ সংরক্ষণমূলক আইনে পরিণত করার প্রয়াস হাস্যকর।
প্রস্তাবিত সংশােধনীতে যে সকল ধারা, উপ-ধারা সংযােজন, বিলুপ্তকরণ এবং সম্প্রসারণের জন্য আনীত হয়েছে তা মূলতঃ বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের পরিবর্তে বন বিভাগের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব স্থাপনের প্রয়াস মাত্র।
প্রস্তাবিত আইনে (৩/ক-তে) “বন” (Forest) এর যে সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে তাতে বাচ্ছাদন জীব বৈচিত্র্যের সম্ভার ইত্যাদিসহ প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রথাগত বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে সরকার ও বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাকে “বন” (Forest) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
এই জাতীয় সংজ্ঞা সম্পূর্ণই প্রশাসনিক এবং সংরক্ষণের ধারণার সাথে মােটেই সামঞ্জস্যপর্ণ নয়। তারপরও “বন” সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক এবং প্রথাগত জীবনাচরণের অন্যান্য অবদানকে স্বীকার না করে, বন রক্ষায় বন বিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য চিহ্নিত না করে কেবলমাত্র প্রসাশনিক সংজ্ঞা প্রদানের মাধ্যম বন বিভাগের “দায়িত্বশীল বন বিভাগের” পরিবর্তে বনজমিদারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াসই লক্ষণীয়।
প্রস্তাবিত (৩/গ 4B, C, 4D) সংশােধনীতে বৃটিশ সরকারের প্রবর্তিত রক্ষিত ও সংরক্ষিত বন। ব্যবস্থাপনাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যদিও এরূপ ক্ষেত্রে বনবাসী ও বননির্ভর স্থানীয় জনগােষ্ঠীর আইনগত ও প্রথাগত অধিকারের নিষ্পত্তির বিষয়টি বরাবরের মতােই উপেক্ষিত থেকেছে।
বিপরীতে সংরক্ষিত বন (Reserved Forest) ঘােষণার ক্ষেত্রে অধিকার নিষ্পত্তির বিষয়ে ৬ ধারায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের ১৮ (আঠার) মাস সময়ের পর অধিকার সম্বলিত দাবি উত্থাপনের সুযােগ বিলুপ্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
এ জাতীয় প্রস্তাবনা পশ্চাদপদ দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত বনবাসীদের ক্ষেত্রে সরকার উদার মনােভাবের পরিবর্তে তাদের অসহায়ত্বকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতাই লক্ষ্য করা যায়। যেমন-পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায়, ১৯৯২ সনে ২৮ নং রেংকায্যা মৌজা, ২৯ নং ছােট মেরুং মৌজা, ৩০ নং বড় মেরুং মৌজা, ৫৩ নং কবাখালী মৌজা, ৫৪ নং তারাবন্যা মৌজা, ৫৫ নং ছােট হাজাছড়া মৌজা এবং ৫৬ নং বড় মেরুং মৌজায় মােট ১২০০০ একর ভূমিকে সংরক্ষিত বন ঘােষণার লক্ষ্যে ৪ ও ৬ ধারায় প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়।
দীর্ঘ ১৮ বৎসরে (১৯৯২ থেকে ২০১০ইং পর্যন্ত) ও উক্ত মৌজায় বসবাসরত আদিবাসী ও বনবাসীদের আইনগত এবং প্রথাগত অধিকারের নিষ্পত্তি (যা’ বন আইনের ১০, ১২-১৮ ধারা মােতাবেক বাধ্যতামূলক) না করে চূড়ান্তভাবে সংরক্ষিত বন ঘােষণা করা হয়।
সংরক্ষণ এবং স্থায়ীত্বশীল ব্যবহারের সুস্পষ্ট কোন উদ্দেশ্য লিপিবদ্ধ না করে প্রস্তাবিত (১৩ নংএর 34A/34B) সংশােধনীতে “Other Forest” (অন্যান্য বন) এর যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা প্রথাগত বনবাসী, পার্বত্যাঞ্চলের আদিবাসী ও জুমচাষীদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
ইতিমধ্যে বনবাসীদের ভূমি, চাষাবাদ, পানি, গােচারণ, চলাচল, পবিত্র ভূমি ও অন্যান্য প্রথাগত অধিকারকে স্বীকৃতি না দিয়ে এবং নিষ্পত্তি না করে বনবাসী ও আদিবাসী অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকাকে রক্ষিত ও সংরক্ষিত বন ঘােষণা করায় বন বিভাগ ও বনবাসী বা আদিবাসীদের মধ্যে বরােধ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯২ সন থেকে ১৯৯৮ সনের মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা মোট ৮৩ টি মৌজায় প্রায় ২ লক্ষ ১৮ হাজার একর ভূমিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি চীড়ান্তভাবে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষিত হযেছে এবং অবশিষ্টাংশ প্রক্রিয়াধীন আছে।
উক্ত চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ও প্রক্রিয়াধীন ভূমির মধ্যে কাপ্তাই বাঁধে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসিত পরিবারের ভূমি, প্রচলিত বিধি অনুযায়ী বন্দোবস্তী প্রাপ্ত ও বন্দোবস্তীর প্রক্রিয়াধীন ভূমি, প্রথাগত জুমচাষীদের ভূমি অন্তর্ভক্ত।
আবারো একই প্রক্রিয়ায় সরকারের একতরফা বিবেচনামত বনবাসী ও আদিবাসী অধ্যষিত এবং তাদের অইনগত ও প্রথাগত অধিকার চর্চায় প্রয়োাজনীয় কোন এলাকাকে “Other Forest” (অন্যান্য বন) এ পযোজ্য সকল বিধি নিষেধ আরোপ করলে তা আদিবাসী বা বনবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের দেবে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে (১৪ নং এর 38c) ব্যক্তি বা কোন সংস্থার মালিকানাধীন ভূমিতে “জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, প্রাকৃতি ঐতিহ্য এবং ইকোসিস্টেমকে ক্ষতি করে এমন সকল প্রকার কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হলেও সরকারী বা বন বিভাগের কোন ভূিমিতে এরূপ কর্মকান্ডের উপর কোন বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়নি; এটা স্ববিরোধীতারই নামান্তর।
প্রস্তাবিত সংশােধনীতে (২১ নং এর 69B) বনকর্মকর্তা কর্তৃক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে এবং ঘটনা ও হতাহতের বিষয়ে “প্রতিবেদন” ও “নিরপেক্ষ” তদন্তের জন্য কমিটি গঠনের যে সকল প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে তা চরম পক্ষপাত দুষ্ট।
এসকল প্রস্তাবনায় ভুক্তভােগী বনবাসীদের মতামতের প্রতিফলন তাে ঘটেইনি বরং বন কর্মকর্তা কর্তৃক “প্রতিবেদন প্রদান ও তদন্ত পরিচালনা” সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তাকে ক্ষমতার অপপ্রয়ােগ ও হতাহতের বিষয়ে প্রতিবেদন ও তদন্ত এর নিরপেক্ষতার স্বার্থে সাক্ষ্য যাচাই বাধ্যতামূলককরণ এবং কমিটি থেকে বন কর্মকর্তাকে বাদ দেয়া প্রয়ােজন।
প্রস্তাবিত সংশােধনীতে (২২ নং এর 76) সরকারকে স্থানীয় বন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং এরূপ কমিটির সদস্য নিবার্চন ও তাদের ক্ষমতা কর্তব্য সীমাবদ্ধ করার একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হলে বনবাসী বা বননির্ভর স্থানীয় জনগােষ্ঠীকেই কমিটি গঠনের প্রাথমিক দায়িত্ব দিতে হবে; অন্যথায় বন ব্যবস্থাপনায় বনবিভাগেরই আধিপত্য বজায় থাকবে যা স্বচ্ছতার স্বার্থেই পরিবর্তন করা সময়ের দাবী।
বনবাসীদের ভূমির অধিকার স্বীকৃতির বিষয়টি ভিন্নভাবে বিবেচনায় না এনে প্রস্তাবিত সংশােধনীতে (২৪ নং এর 84B) অধিকারের রেকর্ড প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বনকর্মকর্তাকে শুনানী ব্যতীত রেকর্ড প্রস্তুত/সংশােধন না করার যে প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে তা জনস্বার্থ বিরােধী। এরূপ প্রস্তাবনা অনুমোদিত হলে রক্ষিত বা সংরক্ষিত বনাঞ্চালসহ পাশ্ববর্তী এলাকাং বনবাসী বা জনগণের ভূমির অধিকার পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উপরােক্ত বাস্তবতার প্রেক্ষিতে জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন এবং পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং ইকোসিস্টেম রক্ষার ক্ষেত্রে প্রভাবক এই বনআইন সংশােধনীর প্রস্তাবসমূহ ব্যাপক আলােচনা পর্যালােচনার দাবী রাখে।
বিশেষ করে বনবাসী, আদিবাসী ও বননির্ভর জনগােষ্ঠীর মতামত এই প্রস্তাবনায় যথাযথ প্রতিফলন যাতে ঘটে তার জন্য ব্যাপক প্রচার, আলােচনা ও বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়ােজন আবশ্যক। এক্ষেত্রে সরকারী, বেসরকারী এবং পরিবেশবাদী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সমূহকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আশা করবাে সরকারও উদার এবং গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পােষণ করবে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এই অঞ্চলে একমাত্র “ম্যান গ্রোব বন” অর্থাৎ সুন্দরবন এর বৃহৎ অংশে এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশীদারও কিন্তু আমরা; আবার এই প্রাকৃতিক বনের উপর নির্ভর করে বহু জনপদ গড়ে উঠেছে। একে রক্ষা করা, পরিচর্যা করা এবং বিশ্ব দরবারে একে তুলে ধরার দায়িত্বও কিন্তু আমাদের। তাই এর উপযােগী আইন ও বিধি প্রণয়ন এখন সময়ের দাবী।
একটা বিষয়ে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদিবাসী জনগােষ্ঠীর লােকেদের প্রত্যেকটা গ্রামের পাশে একটি “পাড়া রিজার্ভ” (Village common Forest) নামে প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণ করা শত বছরের ঐতিহ্য পরিণত হয়েছে।
একইভাবে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের খাসিয়া জনগােষ্ঠী প্রধান এবং একমাত্র জীবিকার অবলম্বন পানচাষের জন্য প্রাকৃতিক বনকে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণ করছে। প্রস্তাবিত আইনে এই পরিবেশ সংরক্ষণমূলক কাজের তাদের কোন স্বীকৃতি এবং তার উপর তাদের অধিকার প্রদানের কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
পরিশেষে একটা বিষয়ে প্রশ্ন রাখতে হচ্ছে, – বিলে এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ও কারণ সম্বলিত বিবৃতির” ২.৩-তে বলা হয়েছে “জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও প্রতিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিধি তৈরীর বিধান; আইনে সংজ্ঞায়িত বনজদ্রব্য দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পচনশীল ঘােষণা; বন কর্মকর্তার দ্বারা বন দুষ্কৃতকারী আহত/নিহত হলে অনুসরণীয় পদ্ধতি; বন ব্যবস্থাপনার স্থানীয় জনগােষ্ঠীর সম্পৃক্তকরণ; বনভূমি লীজ প্রদান এবং অন্যবিদ ব্যবহার সীমিতকরণ এবং বনভূমি ও অন্যান্য সরকারী ভূমি জরীপকালীন সময়ে সতর্কতা অবলম্বন; এবং প্রচলিত আইনে স্বীকৃত উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গােষ্ঠীর স্বার্থ সুরক্ষায় যে বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে তার সাথে প্রস্তাবিত সংশােধনীর দ্বারা তার উদ্দেশ্য পূরণ আদৌ সম্ভব হবে কি?
লেখক: সুদত্ত বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা।
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।