Forest (Amendment) Act, 2012ঃ একটি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ

Jumjournal
Last updated Dec 26th, 2020

571

featured image

সরকার কর্তৃক ২৯শে ফেব্রুয়ারী/২০১২ তারিখ মহান সংসদে “অধিকতর সংশােধন কল্পে আনীত “Forest Act/1927” এর যে সংশােধনী প্রস্তাব সংসদে বিল আকারে উত্থাপনের আগে সংশ্লিষ্ট জনগােষ্ঠী বিশেষ করে বনবাসী বননির্ভর জনগােষ্ঠী এবং আদিবাসীসহ পরিবেশবাদী সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞদের ব্যাপক আলাপ, আলােচনা ও মতামত প্রদানের সুযােগ সৃষ্টি করা এড ছিল বলে আমরা মনে করি।

এই সংশােধনী প্রস্তাবটি বর্তমানে আরাে যাচাই বাছাই এর জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নিকট প্রেরণ করা হয়েছে এবং পরবর্তী সংসদ অধিবেশনে তা অনুমােদনের জন্য সংসদে পেশ করা হতে পারে।

তারপরও এই ক্ষুদ্র পরিসরে প্রস্তাবিত সংশােধনীটি যাদের উপর বেশী প্রভাব পড়বে বলে আমার ভক বিশ্বাস সেই আদিবাসী, বনবাসী এবং বননির্ভর জনগােষ্ঠীর সচেতন অংশের প্রতি প্রস্তাবিত সংশােধনটি আরাে গভীরভাবে আলােচনা পর্যালােচনা এবং আরাে অধিক সংখ্যক জনগণের মধ্যে। বিতর্ক ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

বৃটিশ উপনিবেশিক শাসনকালে শাসন ও লুণ্ঠনকে পাকাপােক্ত করার জন্য বিশেষ করে বনজ সম্পদকে নিয়ন্ত্রণ ও শােষনের জন্য ১৯২৭ সনে ২শে সেপ্টেম্বর “Forest Act/1927” (Act No-xvi/1927) আইনটি প্রনয়ন করে।

এই আইনের মূল উদ্দেশ্যে ছিল, কাঠ ও বনজাত পণ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ, শুল্ক আরােপ এবং আর্থিক ভাবে লাভজনক সীমিত প্রজাতির বন বাগান সৃজন। মূলতঃ এই আইনটি সকল ধারা, উপ-ধারা বন ও বনজ সম্পদের উপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রণীত; যা সেই সময়ের উপনিবেশিক শাসক চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে তাদের মূল কাজ দাঁড়ায় পরিবেশ বা জনগণের স্বার্থের বিপরীতে উপনিবেশিক স্বার্থকে রক্ষা ও প্রাধান্য দেয়া।

১৯৭১ সনে দেশ স্বাধীন হবার পর এই আইনের অনেক সংশােধন হলেও মূল চরিত্র। অপরিবর্তিতই ছিল। অর্থাৎ পরিবেশ সংরক্ষণ ও জন কল্যাণমুখী ছিল না।

বর্তমান গণতান্ত্রিক মহাজোট সরকার গুরুত্বপূর্ণ এই বন সহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সহায়ক যত প্রকার আইন ও বিধি আছে তাকে আরাে জনমুখী ও গণতান্ত্রিক করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সংবিধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ যুক্ত করে; যা নিম্নরূপ:

সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “রাষ্ট্র বর্তমান এবং ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবেন।”

সংবিধানের এই সংশােধনীর ফলে বন, পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য তথা সমগ্র ইকো সিস্টেমের সাথে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নাগরিকদের একটি যৌক্তিক সম্পর্ক স্থাপন এবং এই সংক্রান্ত সকল আইন কানুন ও বিধিসমূহকে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক করার পথ প্রশস্ত হলাে।

সংবিধানে এমন একটি গণমুখীও পরিবেশ সংরক্ষণবাদী ধারা যে সরকার সংযোেত করতে পারে তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যােগ্য। সংগত কারণেই সেই সরকারের স জনগনের প্রত্যাশাও অনেক বেশি।

কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, সংবিধানে উপরােক্ত ধারা সংযােজনের পর পরই সরকার পরিবেশের উপর সব চাইতে যে আইনটির প্রভাব বেশি সেই “বন আইন/১৯২৭” কে অধিকতর সংশােধনের জন্য ২৪টি সংশােধনী প্রস্তাবসহ ইতিমধ্যেই সংসদে উত্থাপন করেছে।

কিন্তু উত্থাপনের পূর্বে জাতীয় গুরুতসম্পন্ন ও প্রভাবক এমন একটি আইনের সংশােধনীর বিষয়ে জনমত বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট জনগােষ্ঠী তথা আদিবাসী, বনবাসী এবং বন নির্ভর জনগােষ্ঠীর মতামত প্রদানের সুযােগ না দেয়ার প্রবণতা একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

উপনিবেশিক শাসনের স্বার্থে ও প্রয়ােজনে প্রণীত ১৯২৭ সনের বন আইনকে (যা মূলতঃ প্রশাসনিক আইন) শুধুমাত্র “Make provisions for the conservation and sustainable use of forest” (অথাৎ বনের সংরক্ষণ এবং স্থায়ীত্বশীল ব্যবহারের লক্ষ্যে) এই শব্দগুচ্ছ সংযােজন করে গণমুখী ও পরিবেশ সংরক্ষণ মূলক আইনে পরিণত করার প্রয়াস হাস্যকর।

প্রস্তাবিত সংশােধনীতে যে সকল ধারা, উপ-ধারা সংযােজন, বিলুপ্তকরণ এবং সম্প্রসারণের জন্য আনীত হয়েছে তা মূলতঃ বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের পরিবর্তে বন বিভাগের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব স্থাপনের প্রয়াস মাত্র।

প্রস্তাবিত আইনে (৩/ক-তে)“বন” (Forest) এর যে সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে তাতে বৃক্ষাচ্ছাদন জীববৈচিত্র্যের সম্ভার ইত্যাদিসহ প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রথাগত বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে সরকার ও বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাকে “বন” (Forest) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই জাতীয় সংজ্ঞা সম্পূর্ণই প্রশাসনিক এবং সংরক্ষণের ধারনার সাথে মােটেই সামঞ্জস্য পূর্ণ নয়।

তার পরও “বন” সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক এবং প্রথাগত জীবনাচরণের অন্যান্য অবদানকে স্বীকার না করে, বন রক্ষায় বন বিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য চিহ্নিত না করে। কেবলমাত্র প্রসাশনিক সংজ্ঞা প্রদানের মাধ্যম বন বিভাগকে “দায়িত্বশীল বন বিভাগের পরিবর্তে বনজমিদারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াসই লক্ষ্যণীয়।

প্রস্তাবিত (৩/গ 4B, C, 4D) সংশােধনীতে বৃটিশ সরকারের প্রবর্তিত রক্ষিত ও সংরক্ষিত বন ব্যবস্থাপনাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যদিও এরূপ ক্ষেত্রে বনবাসী ও বননির্ভর স্থানীয় । জনগােষ্ঠীর আইনগত ও প্রথাগত অধিকারের নিষ্পত্তির বিষয়টি বরাবরের মতােই উপেক্ষিত থেকেছে।

বিপরীতে সংরক্ষিত বন (Reserved Forest) ঘােষণার ক্ষেত্রে অধিকার নিষ্পত্তির বিষয়ে ৬ ধারায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের ১৮(আঠার) মাস সময়ের পর অধিকার সম্বলিত দাবি উত্থাপনের সুযােগ বিলুপ্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ জাতীয় প্রস্তাবনা পশ্চাদপদ ও দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত বনবাসীদের ক্ষেত্রে সরকার উদার মনােভাবের পরিবর্তে তাদের অসহায়ত্বকে।

অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতাই লক্ষ্য করা যায়। যেমন-পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলায়, ১৯৯২ সনে ২৮নং রেংকায্যা মৌজা, ২৯নং ছােট মেরুং মৌজা, ৩০নং বড় মেরুং মৌজা, ৫৩নং কবাখালী মৌজা, ৫৪নং তারাবন্যা মৌজা, ৫৫নং ছােট হাজাছড়া মৌজা এবং ৫৬নং বড় মেরুং মৌজায় মােট ১২,০০০ একর ভূমিকে সংরক্ষিত বন ঘােষণার লক্ষ্যে ৪ ও ৬ ধারায় প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়।

দীর্ঘ ১৮ বৎসরে (১৯৯২ থেকে ২০১০ইং পর্যন্ত) ও উক্ত মৌজায় বসবাসরত আদিবাসী ও বনবাসীদের আইনগত এবং প্রথাগত অধিকারের নিষ্পত্তি (যা’ বন আইনের ১০,১২-১৮ ধারা মােতাবেক বাধ্যতামূলক) না করে চূড়ান্তভাবে সংরক্ষিত বন ঘােষণা করা হয়।

সংরক্ষণ এবং স্থায়ীত্বশীল ব্যবহারের সুস্পষ্ট কোন উদ্দেশ্য লিপিবদ্ধ না করে প্রস্তাবিত (১৩ নংএর 34A/34B) সংশােধনীতে “Other Forest” (অন্যান্য বন) এর যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তা প্রথাগত বনবাসী, পার্বত্যাঞ্চলের আদিবাসী ও জুমচাষীদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

ইতিমধ্যে বনবাসীদের ভূমি, চাষাবাদ, পানি, গােচারণ, চলাচল, পবিত্র ভূমি ও অন্যান্য প্রথাগত অধিকারকে স্বীকৃতি না দিয়ে এবং নিষ্পত্তি না করে বনবাসী ও আদিবাসী অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকাকে রক্ষিত ও সংরক্ষিত বন ঘােষণা করায় বন বিভাগ ও বনবাসী বা আদিবাসীদের মধ্যে বিরােধ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ১৯৯২ সন থেকে ১৯৯৮ সনের মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় মােট ৮৩টি মৌজায় প্রায় ২ লক্ষ ১৮ হাজার একর ভূমিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘােষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেকের ও বেশি চূড়ান্তভাবে সংরক্ষিত হিসেবে ঘােষিত হয়েছে এবং অবশিষ্টাংশ প্রক্রিয়াধীন আছে।

উক্ত চূড়ান্তভাবে ঘােষিত ও প্রক্রিয়াধীন ভূমির মধ্যে কাপ্তাই বাঁধে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসিত পরিবারের ভূমি, প্রচলিত বিধি অনুযায়ী বন্দোবস্তী প্রাপ্ত ও বন্দোবস্তীর প্রক্রিয়াধীন ভূমি, প্রথাগত জুমচাষীদের ভূমি অন্তর্ভুক্ত।

আবারাে একই প্রক্রিয়ায় সরকারের একতরফা বিবেচনামত বনবাসী ও আদিবাসী অধ্যুষিত এবং তাদের আইনগত ও প্রথাগত অধিকার চর্চায় প্রয়ােজনীয় কোন এলাকাকে “Other Forest” (অন্যান্য বন) এ প্রযােজ্য সকল বিধি নিষেধ আরােপ করলে তা আদিবাসী বা বনবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দেবে।

প্রস্তাবিত সংশােধনীতে (১৪ নং এর 38C) ব্যক্তি বা কোন সংস্থার মালিকানাধীন ভূমিতে “জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক ঐতিহ্য এবং ইকোসিস্টেম কে ক্ষতি করে এমন সকল প্রকার কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হলেও সরকারী বা বন বিভাগের কোন ভূমিতে এরূপ কর্মকান্ডের উপর কোন বিধি নিষেধ আরােপ করা হয়নি; এটা স্ববিরােধীতারই নামান্তর।

প্রস্তাবিত সংশােধনীতে (২১ নং এর 69B) বনকর্মকর্তা কর্তৃক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে এবং ঘটনা ও হতাহতের বিষয়ে প্রতিবেদন” ও “নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য কমিটি গঠনের যে সকল প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে তা চরম পক্ষপাত দুষ্ট। এসকল প্রস্তাবনায় ভুক্তভােগী বনবাসীদের মতামতের প্রতিফলন তাে ঘটেইনি বরং বন কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতিবেদন প্রদান ও তদন্ত পরিচালনা” সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তাকে ক্ষমতার অপপ্রয়ােগ ও হতাহতের দায় থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সুযােগ করে দেবে।

তাই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঘটনা ও হতাহতদের বিষয়ে প্রতিবেদন ও তদন্ত এর নিরপেক্ষতার স্বার্থে সাক্ষ্য যাচাই বাধ্যতামূলক করণ এবং কমিটি থেকে বন কর্মকর্তাকে বাদ দেয়া প্রয়ােজন।

প্রস্তাবিত সংশােধনীতে (২২ নং এর 76) সরকারকে স্থানীয় বন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এস, এরূপ কমিটির সদস্য নির্বাচন ও তাদের ক্ষমতা কর্তব্য সীমাবদ্ধ করার একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

অংশগ্রহণ মূলক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হলে বনবাসী বা বননির্ভর স্থানী জনগােষ্ঠীকেই কমিটি গঠনের প্রাথমিক দায়িত্ব দিতে হবে; অন্যথায় বন ব্যবস্থাপনায় বনাবভাগেরই আধিপত্য বজায় থাকবে যা স্বচ্ছতার স্বার্থেই পরিবর্তন করা সময়ের দাবী।

বনবাসীদের ভূমির অধিকার স্বীকৃতির বিষয়টি ভিন্নভাবে বিবেচনায় না এনে প্রস্তাবিত সংশােধনীতে (২৪ নং এর 84B) অধিকারের রেকর্ড প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বনকর্মকর্তাকে শুনা ব্যতাত রেকর্ড প্রস্তুত/সংশােধন না করার যে প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে তা জনস্বার্থ বিরােধী। এক প্রস্তাবনা অনুমােদিত হলে রক্ষিত বা সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় বনবাসী বা জনগণের ভূমির অধিকার পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।

উপরােক্ত বাস্তবতার প্রেক্ষিতে জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন এবং পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং ইকোসিস্টেম রক্ষার ক্ষেত্রে প্রভাবক এই বন আইন সংশােধনীর প্রস্তাবসমূহ ব্যাপক আলােচনা পর্যালােচনার দাবী রাখে।

বিশেষ করে বনবাসী, আদিবাসী ও বননির্ভর জনগােষ্ঠীর মতামত এই প্রস্তাবনায় যথাযথ প্রতিফলন যাতে ঘটে তার জন্য ব্যাপক প্রচার, আলােচনা ও বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়ােজন আবশ্যক। এক্ষেত্রে সরকারী, বেসরকারী এবং পরিবেশবাদী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আশা করবাে সরকারও উদার এবং গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পােষণ করবে।

একটা বিষয়ে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আদিবাসী জনগােষ্ঠীর লােকদের প্রত্যেকটা গ্রামের পাশে একটি “পাড়া রিজার্ভ” (Village Common Forest) নামে প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণ করা শত বছরের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। একইভাবে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের খাসী জনগােষ্ঠী প্রধান এবং একমাত্র জীবিকার অবলম্বন পানচাষের জন্য প্রাকৃতিক বনকে যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণ করছে। প্রস্তাবিত আইনে এই পরিবেশ সংরক্ষণ মূলক কাজের তাদের কোন স্বীকৃতি এবং তার উপর তাদের অধিকার প্রদানের কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

পরিশেষে একটা বিষয়ে প্রশ্ন রাখতে হচ্ছে, – বিলে এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ও কারণ সম্বলিত বিবৃতির ২.৩-তে বলা হয়েছে “জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও প্রতিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিধি তৈরীর বিধান; আইনে সংজ্ঞায়িত বনজদ্রব্য দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পচনশীল ঘােষণা; র কর্মকর্তার দ্বারা বন দুষ্কৃতকারী আহত/নিহত হলে অনুসরণীয় পদ্ধতি; বনব্যবস্থাপনার স্থানীয় জনগােষ্ঠীর সম্পৃক্তকরণ; বনভূমি লীজ প্রদান এবং অন্যবিদ ব্যবহার সীমিত করণ এবং বনভূমি a অন্যান্য সরকারী ভূমি জরাপালান সময়ে সতর্কতা অবলম্বন; এবং প্রচলিত আইনে স্বীকৃত উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা নৃ-গােষ্টির স্বার্থ সুরক্ষায় যে বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে তার সাথে প্রতাবিত সংশােবনার দ্বারা তার উদ্দেশ্য পূরণ আদৌ সম্ভব হবে কি?

পরিশিষ্ট : Forest (Amendment) 2012

[জাতীয় সংসদে উত্থাপনীয়]

Forest Act 1927 (Act No. XVI of 1927) এর অধিকতর সংশােধনকল্পে আনীত

বিল

যেহেতু নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্য সমূহ পূরণকল্পে Forest Act 1927 (Act No. XVI of 1927) এর অধিকতর সংশােধন সমীচীন ও প্রয়ােজনীয়;

সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইলঃ-

১। সংক্ষিপ্ত শিরেনাম ও প্রবর্তন।- (১) এই আইন Forest (Amendment) Act 2012 নামে অভিহিত হইবে।

(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।

২। Act No. XVI of 1927 এর পূর্ণাঙ্গ শিরােনাম ও পাবনার সংশােধন। – Forest Act of 1927 (Act No. XVI of 1927), অতঃপর উক্ত Act বলিয়া উল্লিখিত, এর পূর্ণাঙ্গ শিরােনাম অংশে উল্লিখিত “An Act to” শব্দগুলির পর “make provisions for the conservation and sustainable use of forests,” শব্দগুলি ও কমা এবং প্রস্তাবনা অংশে উল্লিখিত “expedient to” শব্দগুলির পর “make provisions for the conservation of forests শব্দগুলি ও কমা সন্নিবেশিত হইবে।

৩। Act No. XVI of 1927 এর section 2 এর সংশােধন। – উক্ত Act এর section 2 এর-
(ক) clause (I) এরপর, নিম্নরূপ নূতন clause (IA) সন্নিবেশিত হইবে, যথা : উল্লিখিত “(IA)”forest” means any land, which is the property of the Government, or over which the Government has propriety rights, or to the whole or any part of the forest-produce to which the Government is entitled and which is entitled and which is declared as forest under this act and also includes reserved forests, protected forests and other forests;”;

(খ) clause (4) এর sub- clause (b) এর paragraph (iii) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ paragraph (iii) প্রতিস্থাপিত হইবে, যথাঃ-

(iii) wild animals and skins, tasks, horns, bones, silk, cocoons, honey, wax, fish, and fish products and all other parts produces of animals and…

(গ) clause (4A) এর পর নিম্নরূপ clause (4B), (4C) এবং (4D) সন্নিবেশিত হইবে, যথাঃ- (4B) others forests means forest declared by the Government as forest under sub- sections (1) of sections 34A of this Act;

(4C) protected forests means forest declared as protected forest under section 29 of this Act;
(4D) “reserved forests means forests declared as forest under section 20 of this Act;”

৪। Act No. XVI of 1927 gcv section এর সংশোধন। – উক্ত এর section 4 এর পরিবর্তে নিম্নরূপ ‍section 4 প্রতিস্থাপিত হইবে, যথাঃ-

4. Notification of Government- Whenever it has been decided to con any land reserved forests, the Government shall issue a notification in official Gazette (a) Declaring that it has been decided to constitute such land rese forests;

(b) Specifying, as nearly as possible, the situation and limits of such land and

(c) appointing such number of officers one of whom shall be a person holding any forests-office (hereinafter called “the forests SettlementOfficer”), as the Government may think fit, to inquire into and determine the existence, nature and extent of any rights alleged to exit in favour of any person in or very any land comprised within such limits, or in or over any forest-produce, and to deal with the same as provided in this Chapter.

Explanation. –For the purposes of Clause (b) it shall be sufficient to describe the limits of the forests by roads, rivers, ridges or other well-known or readily intelligible boundaries.

৫। Act No. XVI of 1972 এর section 6 এর সংশোধন। – উক্ত Act এর section 6 এর clause (c) এ উল্লিখিত “three months and not more than four months” শব্দগুলির পরিবর্তে “six months and not more than eighteen months ” শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে।

৬। Act No. XVI of 1972 এর section 9 এর সংশোধন।- উক্ত Act এর ‍Section 9 এ উল্লিখিত extinguished শব্দটির পরে উল্লিখিত কমার পরিবর্তে ফুলস্টপ বসিবে এবং অতঃপর নিমরূপ কমাগুলি, শব্দগুলি, সংখ্যাগুলি এবং ফুলস্টপ বিলুপ্ত হইবে, যথাঃ- “Unless, before the notification under section 20 is published, the person claiming, them satisfies the Forests Settlement Officer that he had sufficient cause for not preferring such claim within the period fixed under section 6″।

৭। Act No. XVI of 1972 এর section 16A এর সংশােধন।-উক্ত Act এর section 16A এর sub_section (i) এর clause (i) এ উল্লিখিত section 6 and 9 শব্দগুলি ও সংখ্যাগুলির পরিবর্তে শব্দগুলি ও সংখ্যা প্রতিস্থাপিত হইবে।

৮। Act No. XVI of 1972 এর section 20 এর সংশােধন।-উক্ত Act এর section 20 এর clause (a) এ উল্লিখিত or section 9 শব্দগুলি ও সংখ্যা বিলুপ্ত হইবে।

৯। Act No. XVI of 1972 এর section 26 এর সংশােধন। –উক্ত Act এর section 26 এর sub section (I) এ উল্লিখিত “six months” এবং “two thousand taka” শব্দগুলির পরিবর্তে যথাক্রমে “one year ” এবং “ten thousand taka” শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে।

১০। Act No. XVI of 1972 এর section 30 এর সংশােধন। – উক্ত Act এর section 30. এর clause (b) এ উল্লিখিত “not exceeding thirty years” শব্দগুলি ও কমাগুলি বিলুপ্ত হইবে।

১১। Act No. XVI of 1972 এর section 33 এর সংশােধন। –উক্ত Act এর section 33 এর sub section (I) এ উল্লিখিত “six months” এবং “two thousand taka” শব্দগুলির পরিবর্তে যথাক্রমে “one year” এবং “ten thousand taka” শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে।

১২। Act No. XVI of 1972 এর CHAPTER XVI এর শিরােনাম সংশােধন।-উক্ত Act এর CHAPTER VI এর শিরােনাম “OF PROTECTED FORESTS” এর পরিবর্তে নিম্নরূপ শিরােনাম প্রতিস্থাপিত হইবে, যথাঃ-

“OF PROTECTED AND OTHER FORESTS”

১৩। Act No. XVI of 1972 এর section 34A ও 34Bএর সন্নিবেশ।-উক্ত Act 34 এর এর পর নিম্নরূপ ও সন্নিবেশিত হইবে, যথাঃ-

“34 A. Others forests.- (1) The Government may, by notification in the official Gazette, declare the provisions of this Chapter, as far as it is applicable to any waste-land or char land or forest plantation, which is not included in a reserved forest or protected forest but which is the property of Government, or over which the Government has property right, or to the whole or any part of the forest- produce to which the Government is entitled.

(2) The waste-land, char land r forest plantation comprised in any such notification shall be called other forest.
“34B. Acts prohibited in Other forests.- Any person who commits any of the following offences, namely :-
(a) fells, girdles, lops, taps or burns any tree or strips off the bark or leaves from, or otherwise damage the same;

(b) Clears or breaks up any land for cultivation or any other purpose or cultivates or attempts to cultivate any land in any other manner:

(c) Sets fire to a other forest, or kindles any fire burning, in such manner as to endanger such a forests;

(d) in contravention of any rules made in this behalf by the Government, hunts, shoots, fishes, poisons water or sets trap or snares; or

(e) establishes saw-pits or saw-benches or convents trees into timber without lawful authority;

Shall be punishable with imprisonment for a term which may extend to one year and shall also be liable to fine which may extend to ten thousand taka, in addition to such compensation for damage done to the forest as the convicting Court may direst to pay.”

১৪। Act No. XVI of 1927 এর section 38C এর সংশোধন।- উক্ত Act এর section 38C sub-section (1) এ উল্লিখিত “threat to property” শব্দগুলি ও কমার পর “conservation of biodiversity, natural heritage, and ecosystem” শব্দগুলি কমাগুলি সন্নিবেশিত হইবে।

১৫। Act No. XVI of 1927 এর section 39 এর সংশোধন।- উক্ত Act এর section 39এর- (ক) sub-section (1) এ উল্লিখিত “forest produce” শব্দগুলি ও হাইফেনের পরিবর্তে “forest-produce and other services” শব্দগুলি ও হাইফেন প্রতিস্থাপিত হইবে;

(খ) sub-section (1) 97 clause (a) u Tratto “which is produced” *1781615 9177 “or rendered” শব্দগুলি সন্নিবেশিত হইবে।।

১৬। Act No. XVI of 1927 এর section 41 এর সংশােধন।- উক্ত Act এর section 41 এর clause (2) এ উল্লিখিত “and brick-fields” শব্দগুলির পরিবর্তে “brick-fields, the selling of bamboo, sawn timber and round logs” শব্দগুলি ও কমাগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে।

১৭। Act No. XVI of 1927 এর section 42 এর সংশোধন।- উক্ত Act এর section 42 এর clause (42) এ উল্লিখিত “three years,” এবং “two months,” এবং “ten thousand taka” এবং “five thousand taka” শব্দগুলি ও কমাগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে।

১৮। Act No. XVI of 1927 এর section 54 এর সংশোধন।- উক্ত Act এর section 54 এ উল্লিখিত “the Magistrate shall,” শব্দগুলি ও কমার পর “within thirty days, প্রতিস্থাপিত হইবে। শব্দগুলি ও কমার পর প্রতিস্থাপিত হইবে।

১৯। Act No. XVI of 1927 এর section 56 এর সংশোধন।- উক্ত Act এর section 56 এ এর বিধান ‍sub-section (1) হিসাবে সংখ্যায়িত হইবে এবং অতঃপর নিম্নরূপ নূতন ‍sub-section (1) সংযোজিত হইবে, যথাঃ-

“(2) No forest-produce and tools, vessels, and vehicles used in committing any forest offence and seized under section 52 of this Act shall be released as interim measure by the Court before conclusion of trial for forest offence.”।

২০। Act No. XVI of 1927 এর section 59B এর সংশোধন।- উক্ত Act এর section 58 এ বিধান নিম্নরূপ নূতন Explanation সংযোজিত হইবে, যথাঃ-
“Explanation: any forests produce, specified in clause (a), sub- clause (i). (ii), (iii) and (iv) of clause (6) under section 2 of the Act, shall be treated as property subject to speedy and natural decay for the purpose of this section.”

২১। Act No. XVI of 1927 এর section 59B এর সন্নিবেশ।- উক্ত Act এর section 69A এ এর পর নিম্নরূপ নূতন এর section 69B সন্নিবেশিত হইবে, যথাঃ-

“ 69B. Production upon use of firearms.- In the course of his official duties when a forest officer has been compelled to resort to the use of firearms in exercise of his right of private defence of person or property, the following procedure shall be adopted-
(a) The wounded must be given first-aid and the wounded and the deceased, if any must be removed as quickly as possible to the nearest hospital;
(b) As soon as this has been done, the senior forests officer present at the firing shall draw up a full report of the occurrence, stating-
(i) The place of occurrence
(ii) The name of the forests officers and other staffs present;
(iii) The number of round fires;
(iv) The number and the names of the persons killed and wounded
(v) The measures taken to render first-aid and the hospital to which the casualties have been sent;
(vi) An account of the events proceeding and leading to the firing including an explanation of the reasons for the resort to firearms; and
(vii) Any other relevant details;

(c) the report prepared under clause (b) should be taken by the reporting officer who will immediately forward it in original to the Officer-in-Charge of the police station within the jurisdiction of which the firing took place and shall also send a copy to the Divisional Forest Officer and to the Districts Magistrate;

(d) on receipt of his copy of the report the District Magistrate shall, if injuries have been inflicted as a result of the firing, constitute an enquiry committee comprising three members, namely-
(i) Representative of the District Magistrate, not below the rank of Additional Deputy Commissioner;
(ii) Representative of the Superintendant of Police, not below the rank of Assistant Superintendant of Police; and
(iii) Representative of the Divisional Forest Officer, not below the rank of Assistant Conservator of Forests;

– To make a full enquiry to ascertain whether the firing was justified;

(e) It should be independent enquiries made by the police or Magistrate under section 174 Or 176 or other sections of the Code of Criminal Procedure Act, 1898 (Act No. V of 1898), but the evidence recorded in such enquiries may be used

(f) The report prepared under clause (b) shall be laid before the enquiry committee without delay to assist the enquiry committee;

(g) The representative of parties by pleaders or other legal practitioners shall not be allowed, but officer whose conduct is at issue in the enquiry, shall be allowed to examine or cross-examine witnesses and submit statements;

(h) On completion of the enquiry a report shall at once be sent to the Government by he enquiry officer through the usual channel and a copy of Forests; made over to the Divisional Forest Officer for submission to the Conservator of Forest.

(i) The Divisional Forest Officer shall attend the enquiry and assist the enquiring officer.

২২। Act No. XVI of 1927 এর section 76 এর সংশােধন।- উক্ত Act পর section 76 clause (a) এরপর নিম্নরূপ নূতন clause (aa) সন্নিবেশিত হইবে, যথাঃ-

(aa) to constitute local forest management committee and regulate the “…selection of committee members, and limit their powers and duties,

২৩। Act No. XVI of 1927 এর section 77 এর সংশােধন।- উক্ত Act পর section ৭৭ এ উল্লিখিত “six moths,” এবং “ five thousand taka.” শব্দগুলির পরিবতে যথাক্রমে “ two years,” “ fifty thousand taka,” ও কমার পর প্রতিস্থাপিত হইবে।

২৪। Act No. XVI of 1927 এ section 84A, 84B এর 84C এর সন্নিবেশ।- উক্ত Act section 84 এর পর নিম্নরূপ_section 84A, 84B এবং 84C এরপর সন্নিবেশিত হইবে। যথাঃ-

84A. Lease of Forests land prohibited.- Notwithstanding continued in any other law for the time being in force, no forest shall be leased out or handed over in partly or fully with usufracturay or easement right to any private individual or any agency in any form or for any purpose including construction of roads, infrastructure, brick-fields and establishment of industries subject to the provision under section 27.

84. B Obligation of hearing forest officer in preparing record of rights. – Notwithstanding anything continued in any other law for the time being in force, no land, recorded in favour of the Forest Department or Deputy Commissioner, on behalf of the Government, shall be recorded in the name of any private individual or any agency in the course of any survey and settlement operation until the nearest forest officer is given the opportunity to be heard.

85.C Reaffirmation of traditional and customary rights of the ethnic minority group.- Special measures shall be undertaken to protect the traditional and customary rights of the ethnic minority group as recognized in the existing laws.

উদ্দেশ্য ও কারণসম্বলিত বিবৃতি

প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে বন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৃটিশ ভারতবর্ষে জনসংখ্যার অনুপাতে বন ছিল প্রচুর। তবুও ভবিষ্যত প্রয়ােজন অনুধাবন করে বন ও বনজসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রণীত হয় The Forest Act, 1927।

ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনের উপর চাপ বৃদ্ধি পায় এবং বনজ সম্পদ সংক্রান্ত অপরাধের পরিমাণ বেড়ে যায়। বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা যুগােপযােগী করার জন্য এ আইনে ২০০০ সাল পর্যন্ত বহু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন আনা হয়েছে।

২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশােধনী দ্বারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে সংযােজিত ১৮ক অনুচ্ছেদ মতে “রাষ্ট্র” বর্তমান এবং ভবিস্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ উন্নয়ন করবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবেন।”

০২। ১৯২৭ সালে প্রণীত বন আইনে বন সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন বিধান থাকলেও বনের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বনের ধারাবাহিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, সংরক্ষিত বন ঘােষণা পদ্ধতি তরান্বিতকরণ, বন সংরক্ষণের জন্য যুগােপযােগী বিধান করার প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেওয়ায় ও বন ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুষ্ঠু এবং সুচারুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে বিদ্যমান বন আইনে কতিপয় বিধান সংযােজন, কতিপয় বিধান দ্রুত প্রয়ােগযােগ্য এবং প্রয়ােগিক দিক সুসংহত করার জন্য The Forest Act, 1927 এর অধিকতর সংশােধনের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয়। সে প্রেক্ষিতে নিম্নবর্ণিত সংশােধনী আনয়ন করা হয়েছে :

বন ব্যতীত সরকারি সতার কার্যক্রম তরান্বিত কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্তকরণ;

রিমাণ এবং প্রবণতা

বিধায় বন অপরাধের শাস্তির

২.১ আইনে কতিপয় ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞা সংযােজন; রক্ষিত বন ও সংরক্ষেত বন ব্যতীত সরাসরি যে বন আছে তা ব্যবস্থাপনার জন্য আওতায় আনয়ন; সংরক্ষিত বন ঘােষণার কার্যক্রম তরান্বিত করার লক্ষ্যে ফরেষ্টে সেটেলমেন্ট অপিসারের সাথে একজন বন কর্মকর্তা অন্তর্ভূক্তকরণ; সংরক্ষিত বন ঘােষণার সার্বিক সময় সীমিতকরণ; বন মামলা আমলে গ্রহণ তরান্বিতকরণ।

২.২ বন অপরাধের শাস্তির পরিমাণ নগণ্য হওয়ার কারণে বন অপরাধের পরিমাণ এবং প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং বন অপরাধী প্রায়শঃ একই অপরাধ সংঘটন করে বিধায় বন অপরাধে শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধিকরণ; বন অধিদপ্তর বনজদ্রব্য ব্যতীত অন্যান্য যে সকল বাে প্রদান করে তা আইনের আওতায় আনয়ন; বাঁম, চিড়াই-কাঠ গােল-কাঠ বিপণন নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় আনয়, বন অপরাধে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, যানবাহন, ইত্যাদি মুচলেকায় অবমুক্ত নিরুৎসাহিতকরণ।

২.৩ জীববৈচিত্র, প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও প্রতিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিধি তৈরির বিধান; আইনে সংজ্ঞায়িত বনজদ্রব্য দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পচনশীল ঘােষণা; বন কর্মকর্তা দ্বারা বন দুস্কৃতিকারী আহত/ নিহত হলে অনুসরণীয় পদ্ধতি, বন ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগােষ্ঠীকে সম্পক্তকরণ;

বনভূমির লীজ প্রদান এবং অন্যবিদ ব্যবহার সীমিতকরণ এবং বনভূমি ও অন্যান্য সরকারি ভs জরীপকালীন সময়ে সতর্কতা অবলম্বন; এবং প্রচলিত আইনে স্বীকৃতি উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা নৃ-গােষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা।

৩। ১৯৭১ সাণে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর The Forest Act, 1927-কে বাংলাদেশের বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও পরিচালনার জন্য বলবৎ করা হয়। ১৯৮৯, ১৯৯০ ও সর্বশেষ ২০০০ সালে আইনটি সংশােধন করা হয়েছে।

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আইনটি যুগােপযােগী করার প্রয়ােজনীয়তা অনুভূত হয়। এ লক্ষ্যে The Forest Act, 1927-এর প্রয়ােজনীয় সংশােধনের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষজ্ঞবৃন্দের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি কর্তৃক প্রয়ােজনীয় সংশােধনের প্রস্তাব করা হয়। মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাব উক্ত প্রস্তাব ১৯৮-২০১০ তারিখে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় উপস্থাপন করা হয় এবং বিস্তারিত আলােচান পর্যালােচনান্তে অনুমােদিত হয়।

৪। The Forest (Amendment) Act 2012 এর খসড়া বিল নীতিগতভাবে অনুমােদনের জন্য গত ১৫-১১-২০১০ তারিখে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে পেশ করা হলে, মন্ত্রিসভা বৈঠকের আলােচনায় কতিপয় ধারা বিয়ােজন, সংশােধনী অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ ক্ষুদ্র নৃ-গােষ্ঠীর স্বাৰ্ত সুরক্ষার বিষয়ে সংশােধনীসহ নীতিগত অনুমােদিত হয়।

মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলােকে সংশােধনপূর্বক The Forest (Amendment) Act 2012 এর খসড়া বিল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে ভেটিং এর জন্য ০১-২.২০১১ তারিখে প্রেরণ করা হয়।

লেজিসলেটিভ বিভাগ কর্তৃক পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একাধিক সভা আয়ােজনের মাধ্যমে আইনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালােচনা ও বিশ্লেষণ করে কতিপয় ধারায় আইনের প্রয়ােগ, শাস্তির বিধান, ক্ষদ ন-গােষ্ঠীর স্বার্থ সুরক্ষাসহ সংশােধন, সংযােজন, বিয়ােজন ও পরিবর্তন করে ভেটিং করা হয়।

৫। ভেটিংকৃত আইনটি ১৯ অক্টোবর, ২০১১ তারিখ মন্ত্রিসভায় বিস্তারিত আলােচনান্তে চূড়ান্ত অনুমােদন লাভ করে।

৬। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের বন সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং বন সংরক্ষণের কার্যক্রমকে জোরদার করার লক্ষ্যে বিদ্যমান The Forest Act, 1927 (Act XVI of 1927) . এর যুগােপযােগী সংশোধনী আনয়নের জন্য “The Forest (Amendment) Act 2012” বিল আকারে মহান জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হলাে।

ড. হাছান মাহমুদ ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী।
ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী।

লেখকঃ সুদত্ত বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা।

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা